Inspirational journeys

Follow the stories of academics and their research expeditions

প্যানিক ডিজঅর্ডার বা আতঙ্কের অসুখ | মানসিক সমস্যা থেকে ফিরে আসার বাস্তব জীবনের গল্প

Saddam Sir

Tue, 16 Apr 2024

প্যানিক ডিজঅর্ডার বা আতঙ্কের অসুখ | মানসিক সমস্যা থেকে ফিরে আসার বাস্তব জীবনের গল্প

প্যানিক ডিজঅর্ডার বা আতঙ্কের অসুখ | মানসিক সমস্যা থেকে ফিরে আসার বাস্তব জীবনের গল্প: মানসিক সমস্যা থেকে ফিরে আসার বাস্তব জীবনের গল্প। এম সাদ্দাম হোসেন (29 বছর), )এক 1.5 বছর) সন্তানের বাবা। স্ত্রী-ছেলে নিয়ে  সাতক্ষীরাতে বসবাস করেন। রাজ্ মিস্তিরি ও অনলাইন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শিখুন এবং প্রাক্টিস করছেন। তবে মাঝেমধ্যেই তার শরীর খারাপ লাগে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, শরীরে ঘাম হয় ও দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় এখনই তিনি মারা যাচ্ছেন। শুরুটা হয়েছিল একটি সাথে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থতা!

এভাবে আধা ঘণ্টার মতো থাকে অসুস্থতা। পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে এ রকম হওয়ার একটা ভয় তার মনে সারাক্ষণই কাজ করে। অনুভূতিটা সহ্যের বাইরে। তিনি এই লক্ষণ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অনেকবার ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তেমন কিছু অসুবিধা পাননি। কয়েক বার হসপিটালে ভর্তি হওয়া হসপিটালের মেডিসিন বিভাগের  প্রধান ডাক্তার বলেন তিনি আর ঠিক হবেনা। মানুষিক সমসসায় সে জড়িয়ে গেছে ।

ক্যান্সারহলে তো মানুষ মারা যায় কিন্তু তিনি মরবেনা । শুধু এভাবে মানুষকে ও পরিবার কে জ্বালাবে । রোগটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এবং পরিবারকে বলেন তাকে আর হাসপাতালে আনার প্রয়োজন নেই।  হোসেন বলেন তাহলে সুস্থ হওয়ার উপায় কি? ডাক্তার বলেন এটা কখনো ভালো হবে না! হোসেন বলেন তাহলে কি হবে? ডাক্তার বলেন পরবর্তীতে এটি আরো বেশি হবে! তবে হোসেন বলেন মেডিসিন বিভাগের  প্রধান ডাক্তার তিনি কোন বিষয় কি ইঙ্গিত করে বলেছেন সেটি তার জানা নেই 

তবে  মানসিক সমস্যা থেকে অবশ্যই------------- ফিরে আসা যায়! যদি সঠিক একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য নেয়া যায়! সাদ্দাম হোসেন আরো বলেন যেমন আমি আজ সম্পূর্ণ সুস্থ এমনকি এই আর্টিকেলটি লিখছে। দীর্ঘ দুই আড়াই বছরের মর্মান্তিক রোগ থেকে ফিরে আসার পিছনে আল্লাহর অশেষ রহমতে যে ডাক্তার আমাকে সাহায্য করেছেন তিনি হচ্ছেন (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেজর ডাক্তার এ কে এম নাজমুল হাসান (MBBS, FCPS (Psychiatry)) and ডাক্তার আব্দুর রশিদ (MBBS) (মেডিসিন)

 সাদ্দাম হোসেন আরো  বলেন: তবে ফ্যামিলির সাপোর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছি তখন আমার ফ্যামিলির সাপোর্ট ছিল অনেক স্ট্রং। বিশেষ করে আমার স্ত্রী  (সোনালী হোসেন) পিতা-মাতা শশুর শাশুড়ি ভাই বোন ও সকল আত্মীয়-স্বজন তারা খুবই কেয়ার করতো আমাকে! আমি এখন মনে করি: মানসিক রোগ কোন রোগী নয় এটি থেকে মুক্ত হওয়া যায় এটি ভালো হয়ে যায়!

40 থেকে 50 টা ছোট বড় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি কমবেশি ওষুধ খেয়েছি এবং 60 থেকে 70 টা কবিরাজ দেখিয়েছে কমবেশি ওষুধ খেয়েছি ও দোয়া তাবিজ  নিয়েছি কাজ হয়নি।  সঠিক রোগের জন্য সঠিক ডাক্তার প্রয়োজন। আর অবশ্যই সে ডাক্তারকে হতে হবে মানুষরূপী ডাক্তার কষাই নামের ডাক্তার না। 

40 থেকে 50 টা ছোট বড় ডাক্তার এর মধ্যে অনেক এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছে যারা এই ধরনের রোগী যখন তাদের পাশে যায় তারা রোগীকে বসতে বলার আগে প্রেসক্রিপশন করে দেয়। কিসু শুনতেও চায়না। কারণ এই ধরণের রোগির বেশ কিছুটা পাগলের মত হয়ে থাকে। ইমনকে এই শ্রেণীর ডাক্তাররা এই ধরনের রোগীদের কে মানুষ বলে মূল্যায়ন করে না আমি তার বাস্তব উদাহরণ। এই  ডাক্তাররা একদিনে 40 থেকে 200 রোগী দেখে থাকেন। এক সপ্তা দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়াল দিতে হয়।

এবং যখন তাদের চেম্বারে  যাওয়া হয়, দুই থেকে তিন মিনিটে রোগীদের কে বিদায় করে দেন। এবং মোটা অংকের টাকা নেন। কারণ তারা এখন নামে কাটে। কারণ তাদের নাম ডাক হয়ে গেছে এখন। হতে পারে পূর্বে একসময় তারা হয়তো ভালো মানের ডাক্তার ছিল।  

শুধু তাই না তাদের ব্যবসা এখন পরীক্ষা নির্ভর রোগী যখন তাদের পাশে যায় বেশ কিছু টেস্ট দেয় এবং সেখান থেকে তারা কমিশন খায় রোগীর কাছে পুরাতন টেস্ট রিপোর্ট থাকলেও সেগুলো তারা দেখে না তারা তাদের ইচ্ছামতো পছন্দের জায়গায় পরীক্ষা করতে রোগীকে পাঠিয়ে দেয় সেখানে গেলেও মোটা অংকের পরীক্ষা ফি দিতে হয়! 

সেই তুলনায় ছোটখাটো ডাক্তার গুলো গ্রাম্য ডাক্তার গুলো অনেক ভাল তারা মোটা অংকের টাকা চায় না এবং রোগীর কথাগুলো ভালভাবে শুনে এবং টেস্ট রিপোর্টের নাম রোগীকে হয়রানি করাইন!  যাইহোক ডাক্তারের ব্যবহার যদি ভাল হয় তাহলে আপনি বুঝবেন যে এই ডাক্তার  ভালো এবং ব্যবহার যদি খারাপ হয় ঠিকমতো আপনার সঙ্গে কথা না বলে, আপনার সমস্যাগুলো ঠিকমত না শুনে, তাহলে বুঝবেন এর কাছ থেকে আপনি সুস্থতা আশা করতে পারেন না| এটা আমার মানসিক সমস্যা থেকে ফিরে আসার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা!


এসকল রোগীদের কি হয়?

যাই হোক এই সকল রোগীরা ভয়ে কারো বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারেন না। সেখানে অসুস্থ হলে তো আর ভালো ডাক্তার পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া এই লম্বা রাস্তাটা কীভাবে পার হবেন? অসুখ করলে চিকিৎসা কে করবে? বাড়ি যাওয়া তো দূরের কথা, তার বাড়ির থেকে মাত্র দু-এক মাইল দূরে যাওয়ার সাহস পর্যন্ত তিনি পান না। এর বাইরে যেতে হলে সঙ্গে লোক লাগে। ফলে তার রাজ্ মিস্তিরি কাজ ও ব্যবসার মাল কিনতে অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এমন কি নিজের একটা প্রয়জনীয় জিনিস কিন্ত কারো না কারো উপর নির্ভর করতে হয়। ব্যবসা চালাতে হলে যে প্রচুর যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় তাও তিনি মোবাইলে সারেন। সশরীরে যেতে পারেন না।


কিছু দিন আগে গরমের ছাদে মিস্ত্রি কাজ করতে করতে তার খুব খারাপ লাগল। মাথা ঘুরতে লাগল। মনে হলো এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবেন। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল এখনই মরে যাবেন। কিছুক্ষণ পর একটু ভালো লাগায় কোনোমতে বাসায় ফায়ার আসেন । এরপর একজন গ্রাম্য ডাক্তার কে দেখান তিনি বলেন তার শারীরিক দুর্বলতার কথা তাকে এই মুহূর্তে স্যালাইন পুশ করা উচিত এবং ভিটামিন খাওয়া উচিত! কথামতো চিকিৎসা হলে এবং বেশ কয়েকদিন ভালো থাকলে!

কয়েকদিন পর

পর পর বেশ কয়েকবার এমনটা হলো। এখন ভয়ে আর বাহিরে যান না নিজের কাজ ও করেন না সংসার চালানো অনেক কঠিন । সামান্য কিছু টাকা জোগাড় করে  চিকিৎসা নিয়েছেন। মনের মধ্যে টেনশন,। অসুস্থতার আগে তিনি অনলাইন ফ্রীলান্সিং এর কাজ শিখসিলেন গুগলের বিভিন্ন ব্লগ পড়ে। হঠাৎ একদিন একটি আর্টিকেল পান তার প্যানিক ডিসঅর্ডার নামের একটি রোগ হয়েছে । ব্লগ পোস্টে তিনি আরো জানতে পারে এবং তার অসুখের সাথে মাইল যায় ।

প্যানিক ডিসঅর্ডার হলো একধরনের মানসিক অসুখ, যাতে ব্যক্তি প্রচণ্ড আতঙ্কের শিকার হন এবং এটা ১০-১৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হওয়ার পর আবার ধীরে ধীরে চলে যায়। অনেকে এ ধরনের অ্যাটাকের পর ৩০ মিনিটের মতো শারীরিক দুর্বলতার কথাও বলেন। প্যানিক অ্যাটাকের হার হলো শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ।

পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই রোগ দুই থেকে তিনগুণ বেশি দেখা যায়। প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ হলো- এখনই মারা যাচ্ছি এমন অনুভূতি (এর সঙ্গে থাকে তীব্র আতঙ্ক), বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত হৃদস্পন্দন হওয়া, বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, ঘাম, শরীর ঠাণ্ডা বা গরম হয়ে আসা, শরীর কাঁপা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বমি ভাব বা পেটের অসুবিধা, শরীর অসুস্থ লাগা, মাথা হালকা হয়ে আসা,গল গলা শুকিয়ে আসা, অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি হওয়া, শরীর অবশ হয়ে আসা, শরীর ঝিন ঝিন করা এবং বিভিন্ন রকম ভয়ের চিন্তা ইত্যাদি।

প্যানিকের রোগী সচরাচর কতগুলো পরিস্থিতি ও কাজকে বিপজ্জনক মনে করে এড়িয়ে চলেন। যেমন : তারা একা একা বাড়ি থেকে দূরে কোথাও যেতে চান না। আবার বাড়িতে একা একা থাকতে পারেন না যখনই বাড়িতে একা একা থাকেন তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে যান| ভিড়,  ট্রাফিক জ্যাম, শপিং মল, লিফ্ট ব্যবহার, ট্রেন, বাস, লঞ্চ, প্লেন ইত্যাদি ব্যবহার, বড় সমাবেশ, বড় মসজিদের সামনের সারিতে নামাজ পড়া, ডাক্তার নেই এ ধরনের দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণ, অপরিচিত মানুষের সাথে দীর্ঘক্ষণ গল্প করা, কোন মজলিসে বসে থাকতে না পারা, কোন খেলাধুলায় মন না বসা বা না করতে পারা, কোন এক জায়গায় গেলে অস্বস্তি মনে হওয়া যেমন চুল কাটাতে ব্যাংকে বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে ইত্যাদি! এই সকল বিষয়গুলো যখনই সামনে আসে তখন এড়িয়ে চলে যাওয়া


কেন হয় প্যানিক ডিজঅর্ডার  ?

এ রোগের কারণ বিষয়ে নানা রকম মত প্রচলিত আছে। মস্তিষ্কে রাসায়নিক উপাদানের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই অসুখ হয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। আরেক মত অনুযায়ী, আমাদের সবারই একটি সংবেদনশীল, জন্মগত, শ্বাসরোধবিষয়ক বিপদসংকেত ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এই প্রক্রিয়া খুব সহজেই এবং প্রায়ই চালু হয়ে যায় তবে এটি স্বতঃস্ফূর্ত প্যানিক তৈরি করতে পারে। হঠাৎ যে কোনো সময়ে, যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ধরনের প্যানিক হতে পারে। যেমন, রাতে ঘুমের মধ্যেও এমনটা ঘটতে পারে। অন্য একটি মতে, বৈবাহিক বা ব্যক্তিগত জীবনে দ্বন্দ্ব বা সমস্যা, নিজের বা ঘনিষ্ঠজনের বড় কোনো অসুখ, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু, শিশুর জন্ম, গর্ভপাত, আর্থিক সমস্যা, আর্থিক লোকসান, কর্মস্থলে চাপ, স্বাস্থ্য সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, নেশার প্রতিক্রিয়ায় প্যানিক শুরু হতে পারে। 

তবে ছদ্মনাম সাদ্দাম হোসেন (29 বছর) তার কি কারনে ধরনের রোগ হয়েছিল তা জানা যায়নি তবে তিনি মনে করেন ব্যক্তিগত কাজের চাপ রাত জাগা ফ্যামিলি থেকে কোন একটি ভয় রাখা শারীরিক অসুস্থতা অতিরিক্ত কাজের চাপ, সঠিক টাইমে খাওয়া-দাওয়া না করা, অথবা হতে পারে বংশগত তবে বংশগত এটি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না! তবে তিনি একটি বিষয়ে কিছুটা ধারিনা করেন তা হচ্ছে তিনি পিত মাতা ও ভাই বোন থেকে অনেক দিন বিচ্ছিন্ন ছিল এবং কাজের পাশাপাশি তিনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সিক্ত এবং এই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখা কে তার ফ্যামিলি মেনে নিতে চাইত না তাই তিনি ভয়ের  ভিতরে থেকেও গোপনে এই কাজ শিখতো। এবং অনেক রাট জেগে কাজ করতো আবার দিনের বেলায় তার কর্মস্থলে ৮/১০ ঘন্টা ডিউটি করতো যা অনেক পরিশ্রম ছিল। যাই হোক


তবে কোনো নির্দিষ্ট কিছু ছাড়াও এটি শুরু হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,ভয়ের সময় অধিক দ্রুত শ্বাস নেওয়ার ফলে প্যানিক হতে পারে।

প্যানিক ডিসঅর্ডারের রোগীদের চিন্তার ধরনে অনেক পরিবর্তন আসে, যা তাদের অসুখের টিকে থাকার কারণ হিসেবে কাজ করে। কতগুলো চিন্তা নিচে তুলে ধরা হলো :

  • ‘আমি এখনই মারা যাব।’
  • আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’
  • আমার একটি মারাত্মক ও ব্যতিক্রমী অসুখ হয়েছে।’
  • আমার বড় কোনো অসুখ হয়েছে। ডাক্তাররা ধরতে পারছেন না।’
  • বুকে ব্যথার অর্থ আমার এখনই হার্ট ফেইলিওর বা ব্রেইন স্ট্রোক হবে।’
  • আমার টিউমার, পাইলস, ক্যানসার, হার্ট, কিডনি, ব্রেইনের বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে গুরুতর অসুখ হয়েছে।’
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে বা হবে।’
  • রাস্তায় জ্ঞান হারালে আমাকে কেউ সাহায্য করবে না। আমি বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পেতে পেতে নির্মমভাবে মারা যাব।’
  • আমি আর ভালো হব না।’
  • আমার হার্ট কিডনি সব পুচে গেছে!
  • দুনিয়ার যত ধরনের রোগ আছে যখন সেই ধরনের রোগের সাথে মিশে যায় এমন কোনো ইঙ্গিত তিনি দেখতে পান তখনই তিনি ভেবে ওঠেন মনে হয় আমাকে সেই রোগী গ্রাস করেছে! যা এই মুহূর্তে আমার মৃত্যুর কারণ হতে পারে! 

ছদ্মনাম সাদ্দাম হোসেন (29 বছর) তিনি বলেন মজার ব্যাপার হলো হঠাৎ আমি অসুস্থ আমার প্রেসার লো হয়ে গেছে এখনই আমি মারা যাব এমত অবস্থায় একজন ডাক্তারকেফোন করা হলো তিনি আমার বাসায় আসলেন আসার সাথে সাথে আমি ভালো হয়ে গেলাম ডাক্তার কে কোন ট্রিটমেন্ট করার প্রয়োজন হয়নি এমনকি ডাক্তার কেবলমাত্র এসেছে এখনো চেয়ারে বসে নি! যাই হোক তিনি আরো বলেন! এই অসুস্থ সময়টায় তিনি চোখ বন্ধ করে থাকতেন এবং অনেক কিছু ভাবটেন তবে তিনি মনে করেন এই সময় যদি কোন রোগী চোখ বন্ধ না করে থাকে তাহলে সেটি তার জন্য ভালো হবে কারণ চোখ বন্ধ করে থাকার কারণে বিভিন্ন চিন্তা মস্তিষ্কের ভিতরে আসে এবং যার ফলে তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন

প্যানিক ডিজঅর্ডার রোগীরা সারাক্ষণ

নিজের অসুখ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অসুখের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না বা বেড়ে গেল কি না, তা নিশ্চিত করতে তারা সারাক্ষণই শরীরের দিকে কড়া নজরদারি চালিয়ে যান। কেউ কেউ হার্ট বিট, ব্লাডপ্রেসার এগুলো নিয়মিত মাপেন। অনেকে এমনকি মিনিটে কতবার শ্বাস নিচ্ছেন তাও পরিমাপ করেন। প্যানিকের রোগীরা শরীরের সামান্য খারাপ অবস্থা দেখলেই তার ভুল ব্যাখ্যা করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে লক্ষণ বেড়ে প্যানিক অ্যাটাক হয়। এমন কি দিনে ঠিক টাইমে বাথরুম ও পেশাব না হয় সেটিও চিন্তার একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়!

প্যানিকের রোগীরা অনেক ধরনের জায়গা, কাজ ও পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন যা পরিণামে তাদের অসুখকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যেমন : তাঁরা একা বাইরে যেতে চান না, ট্রাফিক জ্যামে থাকতে পারেন না বা পাবলিক বাস ব্যবহার করতে চান না। এ ছাড়া এঁরা শারীরিক পরিশ্রমও এড়িয়ে যান। কখনো যদি বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হয় তখন অনেকে সঙ্গে কাউকে নিয়ে বের হন। শুধু তাই না এমন কাউকে নিয়ে বের হন তিনি তার বিশ্বস্ত এবং তিনি মনে করেন তিনি যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে সেই ব্যক্তি সামলাতে পারবে!

প্যানিকের যে লক্ষণগুলো তৈরি হয়,

প্যানিকের যে লক্ষণগুলো তৈরি হয়, তার শারীরবৃত্তীয় ব্যাখ্যা আছে। আমরা যখন বিপন্ন হই, তখন নার্ভাস সিস্টেমের অটোনমিক সিস্টেমের অংশ সিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম আমাদের দেহের গ্লান্ড এবং অঙ্গগুলোকে বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে।

ফলে স্নায়ু, মাংসপেশি ও মস্তিষ্কে আরো রক্ত আসে। অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ ও হজম প্রক্রিয়ায় রক্ত সরবরাহ কমে যায়। এভাবে থাইরয়েড ও এড্রিনালিন গ্লান্ড কার্যকরী হয়ে আক্রমণ অথবা পালানোর জন্য অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করে। সারাক্ষণ সিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম কার্যকরী থাকা দেহের জন্য ভালো নয়। যখন বিপদ কেটে যায় বা চাপ কমে যায়, তখন শরীরের ‘শাট অফ’ প্রক্রিয়া চালু হয়। এ ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের অংশ প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়। ফলে আর এড্রিনালিন ক্ষরিত হয় না। হৃদস্পন্দন ইত্যাদি কমে যায়। আমরা আরাম অনুভব করি।

উল্লেখ্য, সিম্পেথিটিক ও প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করতে পারে না। একটি সক্রিয় থাকলে অন্যটি অবশ্যই নিষ্ক্রিয় থাকবে। দুটোর যথাযথ ক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা চলি। দীর্ঘমেয়াদি চাপের ফলে মস্তিষ্কের রিসেপ্টরের ক্ষতি হয়। ফলে শাট অফ বা বন্ধ করার প্রক্রিয়া কাজ করে না। অর্থাৎ প্যারাসিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হচ্ছে না। ফলে এড্রিনালিন রিলিজ হলেও এর নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া কাজ করে না। ফলে হঠাৎ অনেক এড্রিনালিন ক্ষরিত হয় ও প্যানিক ডিসঅর্ডারের লক্ষণ তৈরি হয়।

যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, তখন ছোটখাটো বিষয়কে ভুল ব্যাখ্যা করে আমরা বিপজ্জনক বলে মনে করি। ফলে এটিকে বিপদ হিসেবে ধরে নিয়ে আমাদের দেহ সেভাবে প্রতিক্রিয়া করে। কিন্তু আমাদের ভুল ব্যাখ্যার কারণে সৃষ্ট তথাকথিত বিপদ আর সহসা কাটে না (আসলে বিপদ তো নেই)। কিন্তু দেহ এটিকে বিপদ হিসেবে ধরে নেয়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে সিম্পেথিটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় থাকে এবং আমরা অসুস্থ বোধ করি।

কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, প্যানিক ডিসঅর্ডারের রোগী ঘন ঘন শ্বাস ফেলেন। এর ফলে কতগুলো লক্ষণ তৈরি হতে পারে, যেমন : মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা করা, কানে ধাতব শব্দের মতো শব্দ শোনা, শারীরিক দুর্বলতা, মূর্ছা যাওয়ার অনুভূতি, তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি, অসাড়তা ইত্যাদি। ফলে রোগী ভয় পেয়ে যেতে পারেন যা লক্ষণগুলোকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চললে এবং ঠিকমতো ওষুধ না খেলেও রোগ টিকে থাকে। 

প্যানিক ডিজঅর্ডার হলে  করণীয় : 

চিন্তার ধরন বদলে ফেলুন। অধিক ইতিবাচক বা অধিক নেতিবাচক চিন্তায় কোনো লাভ নেই। ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা করুন। অগ্রিম চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। যদি তবুও চিন্তাগুলো আসতেই থাকে তবে এটিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত  হয়ে যেতে পারেন।

নিজেকে নিজে সাহস দিন। মনে মনে বলুন, ‘এ রকম আগেও বহুবার হয়েছে। আমার কোনো ক্ষতি হয়নি। খারাপ অবশ্য লেগেছে। আবার পরে ঠিকও হয়ে গেছে। এবারও আশা করা যায় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঠিক হয়ে যাবে।’ জন্ম নিয়েছি মরে যেতে হবে দুদিন আগে অথবা পরে চিন্তার কোন কারণ নেই!

মনে রাখবেন, প্যানিক অ্যাটাকে প্রচণ্ড আতঙ্ক ও কষ্ট হলেও এতে মৃত্যু হয় না। অতীতে আপনার বহুবার এ ধরনের অ্যাটাক হয়েছে। আবার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে কেটেও গেছে। এবারও কেটে যাবে। মনে রাখবেন, ডাক্তার বলেছে যে, আপনার শরীরে কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই ভয় নেই। কারণ একজন এমবিবিএস ডাক্তার তিনি অনেক জ্ঞানের অধিকারী তিনি অনেক মানুষকে অসুস্থতা থেকে সুস্থতা করতে অবদান রাখেন!

ডাক্তার ও টেস্টের ফলাফলের ওপর আস্থা রাখুন। নিয়মিত ওষুধ খান। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না, বন্ধ করবেন না বা ওষুধের মাত্রার মধ্যেও কোনো পরিবর্তন আনবেন না।

অপ্রয়োজনে কারো কাছেই সান্ত্বনা নেবেন না। দৌড়ে হাসপাতালেও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সহ্য করুন। একটু পরে এমনিতেই লক্ষণ কমে যাবে।

অসুখের লক্ষণ শুরু হলে ওই বিষয়ে চিন্তা না করে অন্য কোনো বিষয়ে চিন্তা করবেন। কারো সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন (তবে অসুখের বিষয়ে কথা বলা চলবে না)। আশপাশ থেকে হেঁটে আসতে পারেন। টেলিফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আশপাশের মানুষ বা দৃশ্যের দিকে মন দিতে পারেন।

ধীরে ধীরে পেট ভরে শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিন। এভাবে চালিয়ে যান। বেশ কয়েক মিনিট করলে আপনার লক্ষণ কিছুটা কমে আসতে পারে। 

যখন প্যানিক অ্যাটাক হয় তখন কাগজের ঠোঙার মধ্যে শ্বাস ফেলে আবার সেখান থেকেই শ্বাস নেবেন। এভাবে কয়েক মিনিট চালিয়ে গেলে আপনার লক্ষণগুলো কমতে শুরু করতে পারে। ঠোঙাটি এমনভাবে নাক ও মুখের সঙ্গে আটকে নেবেন, যাতে বাইরে থেকে অতিরিক্ত বাতাস ঠোঙার মধ্যে না আসতে পারে। তবে এ কাজে কখনোই প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন না।


একা বের হবেন। সঙ্গে লোক নিয়ে বের হওয়ার কোনো দরকার নেই। পকেটে জরুরি সময়ে খাবার জন্য ওষুধ, খাদ্য বা পানীয় রাখারও কোনো মানে হয় না। মাত্রাতিরিক্ত টাকা-পয়সা রাখার বা অপ্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া করে কোথাও যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভয়ের কারণে একটা গাড়ি ভাড়া কেন করবেন? যদি স্বাভাবিকভাবে বাসে যাতায়াত করার কথা থাকে তবে বাসই ব্যবহার করুন।

প্যানিক ডিসঅর্ডার থেকে বাঁচার জন্য অতিরিক্ত কোনো সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই সতর্কতা ছাড়াই আপনি দিব্যি পারবেন।এগুলো নিলে বরং আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। ভাববেন এগুলোর কারণেই এ যাত্রায় বাঁচলেন। আসলে এমনিতেও কিছু হতো না। আপনার ভয়গুলো মোকাবিলা করুন। যে কাজে ভয় পান সেগুলো করুন। একবারে না পারলে প্রথমে অল্প ভয়ের কাজ করে, এরপর ধীরে ধীরে আরো বেশি ভয়ের কাজগুলো করে সবশেষে চরম ভয়ের কাজগুলো অভ্যাস করতে পারেন। এতে আস্তে আস্তে ভয় কেটে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে ব্যাপারগুলো।  

দেহের শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক আছে কি না তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না হওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলোর দিকে একেবারেই লক্ষ করবেন না। শুধু শুধু বারবার রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন ইত্যাদি মাপার প্রয়োজন নেই।

বিভিন্ন কারণেই শরীরে ক্লান্তি বা কিছুটা খারাপ লাগতে পারে। যেমন :  নিদ্রাহীনতা, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে, জোরে শব্দ হলে, অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত শীত পড়লে, বদ্ধ জায়গায় অনেক্ষণ থাকলে, পরিশ্রম করলে, যৌন মিলন করলে কিছুটা ক্লান্তি বা খারাপ লাগতে পারে। এই খারাপ লাগাটাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করবেন না। এই ভুল ব্যাখ্যা করার কারণে আপনার শরিলটা আরো একটু খারাপ হয়ে যায় এরপর ঠিকই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন!

মৃত্যুকে ভয় পাবেন না। মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে চেষ্টা করতে পারেন। কেউ চিরজীবী হয় না।

ব্যস্ত থাকার জন্য কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। আপনি আর বসে বসে মরে গেলাম টাইপের ভয়ের এবং নেতিবাচক চিন্তা করার অবসর পাবেন না। এ জন্য বলা হয়েছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। ব্যস্ততা আপনাকে প্যানিক অ্যাটাক থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে।

দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন।

নিয়মিত হাঁটতে পারেন।

রিল্যাক্সেশন নামে একধরনের ব্যায়ামের অভ্যাস করলে আপনার লক্ষণ কমতে সাহায্য হতে পারে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ফিটফাট থাকুন। রোগী রোগী ভাব করে ঘুরলে মন ছোট হয়ে যায়।

ওপরের বুদ্ধিগুলো প্রয়োগ করেও যদি আপনার সমস্যা সমাধান না হয় তবে আপনার বিশেষজ্ঞ সাহায্যের প্রয়োজন। ‘কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ নামের একধরনের সাইকোথেরাপি প্যানিক ডিসঅর্ডার চিকিৎসায় বিশেষ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া প্যানিকের চিকিৎসায় ডাক্তাররা বেশ কিছু ওষুধও ফলপ্রসূভাবে প্রয়োগ করে থাকেন।

উপদেশ ও মন্তব্যঃ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেজর ডাক্তার এ কে এম নাজমুল হাসান (MBBS, FCPS (Psychiatry) and ডাক্তার আব্দুর রশিদ (MBBS) মেডিসিন ও  লেখক: এম সাদ্দাম হোসেন (মানসিক সমস্যা থেকে ফিরে আসার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা)

0 Comments

Leave a comment